গত ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ইং তারিখে দৈনিক জনতা’র প্রথম পাতায় ‘চক্রে বন্দী বিমানের ক্রু সিডিউলিং’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের পর ব্যাপক আলোচনা হয়। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট শিডিউল নিয়ন্ত্রণকারী দুর্নীতিবাজরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। দৈনিক জনতার প্রতিনিধি এইআর হাবিবকে হত্যার হুমকি দেয়। হুমকির পরিপেক্ষিতে উত্তরা পূর্ব থানায় জিডি করা হয়। শুরু হয় পুলিশের তদন্ত কাজ। দৈনিক জনতায় সংবাদ প্রকাশের পর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কর্তৃপক্ষ নড়েচড়ে বসেছেন। শুরু হয়েছে বিমানের দুর্নীতিবাজ কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া। অতীতে কেবিন ক্রু সিডিউলিং এ অর্গানোগ্রাম বহির্ভুত ইউনিয়নের নেতাদের তদবিরে এবং চাপে নিয়োগ পাওয়া জুনিয়র পার্সার তাইফ ও জুনিয়র পার্সার ফারুককে অপসারণের পরই বেড়িয়ে আসতে শুরু করেছে সিডিউলিং বিভাগের দুর্নীতি ও অপকর্ম।
জানা গেছে, দেশ স্বাধীনের পরপর গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের রাষ্ট্রপতি একটি অধ্যাদেশ জারি করেন। যা রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশ নং ১২৬। যা রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশ ১৯৭২ সালের ৪ জানুয়ারি নামেই পরিচিত। যার আলোকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স গঠিত হয়। বিমান কর্মচারী বিধিমালা ১৯৭৯ অনুযায়ী পরিচালিত হয় বিমানের সকল কর্মচারীদের অফিসিয়াল আচরণ এবং তাদের কর্মকাণ্ড। কর্মচারীদের কেউ যে কোন ধরনের অনিয়ম অন্যায় করলে শাস্তির বিধান রয়েছে। কর্মচারীদের কেউ অবৈধ আর্থিক লেনদেন করলে আইন অনুযায়ী শাস্তির বিধান বলবত রয়েছে। তাদের কোন অসদাচরণ, প্রমাণিত হলে শাস্তি অবধারিত। শাস্তি হতে পারে নৈতিক স্খলন জনিত কারণে-পদাবনতি, টার্মিনেশন/ডিসমিসাল পর্যন্ত হতে পারে। গত কিছুদিন যাবৎ বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস এর অভ্যন্তরে দলপ্রীতি, স্বজনপ্রীতি, ম্যানেজমেন্ট এর কর্মচারীদের উপর নিয়ন্ত্রণহীনতা বিশেষ করে কর্মচারী ইউনিয়নের ম্যানেজমেন্টের উপর দলীয় প্রভাব বিস্তারই কাল হিয়ে দাঁড়িয়েছে। বেপরোয়া হয়ে উঠেছে কিছু কেবিন ক্রু’রা। যার চাক্ষুস উদাহরণ বিমানের সিডিউল নিয়ন্ত্রণ করে, ভিআইপি ফ্লাইট এবং লাভজনক রুটে অবৈধ আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে ক্রুদের সিডিউল দেয়া। এমনই এক ঘটনায় নিয়ে গত ১১ ই সেপ্টেম্বর ২০২৪ ইং তারিখে দৈনিক জনতা’র প্রথম পাতায় প্রকাশিত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস এর ‘চক্রে বন্দী বিমানের ক্রু সিডিউলিং’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের পর পরই বিমান কর্তৃপক্ষ দুর্নীতিবাজ কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া শুরু করে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, অতীতে কেবিন ক্রু সিডিউলিং এ অর্গানোগ্রাম বহির্ভুত ইউনিয়নের নেতাদের তদবিরে এবং চাপে নিয়োগ পাওয়া জুনিয়র পার্সার তাইফ ও জুনিয়র পার্সার ফারুক নামের দুই জুনিয়র পার্সারকে সম্প্রতি দুর্নীতির কারণে অপসারণের পরই বেড়িয়ে আসতে শুরু করে মূলত সিডিউলিং বিভাগের অপকর্ম।
আরও জানা যায়, ফ্লাইট শিডিউল নিয়ন্ত্রণ নিতে তাইফ-ফারুক সমর্থন জুনিয়র পার্সার হাশমি, জুনিয়র পার্সার সরফরাজ এবং জুনিয়র পার্সার আনন্দের নেতৃত্বে একটি সিন্ডিকেট কে সনাক্ত করেছে জিএম সিকিউরিটি মেজর হাসানের নেতৃত্বে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এর সিকিউরিটি বিভাগ। ফ্লাইট শিডিউলিং কেনা বেচার এই লাখ লাখ টাকার অবৈধ একাধিক লেনদেন এর দায়ে চাকরী হারাতে বসেছেন প্রায় ১০০ জন কেবিন ক্রু। ইতিমধ্যে প্রাথমিক তদন্ত প্রমাণিত হওয়ায় ৫৮ জন কেবিন ক্রু’র নিকট ব্যাখ্যা তলব করেছে কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে জিএম সিকিউরিটি মেজর মাহমুদুল হাসান দৈনিক জনতাকে জানান, ক্রুদের বিকাশ লেনদেনে সন্দেহ হওয়ায় কয়েকজনের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেয়া হয়েছে। বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত চলছে। ইতিমধ্যে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস কাউন্টার একশন প্লান হিসেবে গত ১লা আগষ্ট তারিখে ৫০ জন কেবিন ক্রুকে নিয়োগ দেয়ার বিজ্ঞপ্তিও জারি করেছে। বিমানের প্রাথমিক তদন্তে ইতিমধ্যেই বেড়িয়ে এসেছে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য। সিডিউলার মিরাজ কে ইতিমধ্যে বরখাস্ত করেছে বিমান কর্তৃপক্ষ। একই অপরাধে সংশ্লিষ্ট বিমানের সিডিউলিং দুর্নীতি করা সিন্ডিকেট এর পঞ্চপাণ্ডব খ্যাত তাইফ, ফারুক, হাশমী, সরফরাজ এবং আনন্দের বিরুদ্ধে কেন এখনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়নি সেটা নিয়ে ধোয়াশা সৃষ্টি হয়েছে। বিমান সিকিউরিটি বিভাগের প্রাথমিক তদন্তে আপরাধী প্রমান হওয়ায় প্রায় ৫৮ জনকে শুধুমাত্র ব্যাখ্যা তলব করেছে বিমান, তবে তালিকা আরো দীর্ঘ হতে পারে। বিমান প্রদত্ত চিঠিতে জানতে চাওয়া হয়েছে কেন তাদেরকে বিমান কর্মচারী বিধিমালা অনুযায়ী শাস্তির আওতায় আনা হবে না।
রেগুলেশন শাখার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন, বিমান কর্মচারী বিধিমালা ১৯৭৯ অনুযায়ী অবৈধ আর্থিক লেনদেন একটি অসদাচরণ, প্রমাণিত হলে নৈতিক স্খলন জনিত কারণে পদাবনতি, টার্মিনেশন/ ডিসমিসাল পর্যন্ত হতে পারে। সিডিউলিং নিয়ে উপরের শিরোনাম ‘চক্রে বন্দি বিমানের সিডিউলিং’ শিরোনাম এ সংবাদ প্রকাশের পর দৈনিক জনতার উত্তরা প্রতিনিধি এইচআর হাবিববে জীবননাশেরও হুমকি দেয় এই চক্রের সদস্যরা। মূলত সিডিউলিং এর পুরোটা দেখভাল করে এই চক্রের অন্যতম সদস্য প্লানিং ও সিডিউলিং ম্যানেজার আনিকা এবং তাকে সহযোগিতা করতেন এই চক্রের উপরে উল্লেখিত ৫ সদস্যের বাহিনী। এমনটাই চাউর রয়েছে বিমান অফিসের অভ্যন্তরে। আনিকা নিজের সার্ভিস রেগুলেশন উপেক্ষা করে সার্কুলার, নোটিশ বা কোন প্রকার বিজ্ঞপ্তি ছাড়া তাইফ এবং ফারুক নামের দুই অভিযুক্ত জুনিয়র পার্সারকে অজ্ঞাত প্রটোকলে অফিসে বসিয়েছেন তা সবার অজানা। বিমানে এমন নিয়ম উপেক্ষার উদাহরণ অতীতে কোন নজির নেই। যা নিয়ে উম্মাহ প্রকাশ করেছেন বিমানের সাবেক ও বর্তমান অনেকেই। উপরের উল্লেখিত অভিযোগ এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নিচ্ছে এমন প্রশ্নে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস এর পরিচালক (গ্রাহক ও সেবা) হায়াৎ উদ দৌলা দৈনিক জনতাকে জানান, বদলি শাস্তি মূলত প্রতিষ্ঠানের চলমান প্রক্রিয়া। সিডিউলিং অনিয়মে কয়েকজনের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেয়া হয়েছে। নতুন ক্রু নেয়ার সার্কুলার জারি হয়েছে। ক্রু নিয়োগের পর পরিস্থিতি বদলে যাবে। আমাদের প্রতিনিধি জানতে চান শাস্তি পাওয়ার পর কি নিয়মে জুনিয়র পার্সার তাইফ এবং জুনিয়র পার্সার ফারুক পুনরায় দ্বায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বিস্তারিত জানতে তার অধীনস্থ কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলতে বলেন। পরিস্থিতি বলছে বিমান আকাশে উড়লেও অশান্তি ভর করছে তাতে। যাদের উপর ভরসা করে বিশ্বাসে নিয়ে উড়বে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস সেই বিশ্বাসের ঘর এখন ইদুর এর দখলে। খুব দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে জাতীয় পরিচয় বয়ে বেড়ানো এই বাহন মুখ থুবড়ে পরতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট মহল মনে করছেন।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

দৈনিক জনতায় সংবাদ প্রকাশের জের
বিমানের ক্রু সিডিউলিং দুর্নীতিতে তাইফ ও ফারুককে অপসারণ
- আপলোড সময় : ১০-১০-২০২৪ ০৩:১০:০৮ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ১০-১০-২০২৪ ০৩:১০:০৮ অপরাহ্ন


কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ